চুল পড়া বন্ধ করতে ১০টি ঘরোয়া কার্যকরী উপায়
আমাদের জীবনে চুল পড়ার সমস্যা একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আমাদের চুল বেশি বেশি পড়তে শুরু করে। জীবনের কোন এক সময় সকল মানুষই প্রায় চুল কেন পড়ে বা চুল পড়া রোধ করতে কার্যকরী উপায় কি এ সম্পর্কে জানতে চাই।
চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চুল যে কেউ হারাতে পারে।বা যে কোন বয়সের মানুষের চুল পড়া শুরু হতে পারে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দ্রুত চুল পড়ে যায় এবং চুল পড়ার সমস্যাটি স্থায়ী হয়। তবে সঠিকভাবে যদি আমরা চুলের পরিচর্যা করতে পারি এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারি তাহলে চুল পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করেছি এই ব্লগের মাধ্যমে কিভাবে চুল পড়া রোধ করা যায় সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা তুলে ধরার জন্য আশা করি পুরো ব্লগটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পেজ সূচিপত্রঃ চুল পড়া বন্ধ করতে ১০টি ঘরোয়া কার্যকরী উপায়
-
গরম তেল মালিশের মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা
-
নারিকেল তেল ব্যাবহার করে চুল পড়া বন্ধ করা
-
লেবু চুল পড়া বন্ধ করতে কত টা কার্যকরী
-
অ্যালোভেরা ব্যবহার করে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
-
কোন কোন খাবারের মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা যায়
- চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
- চুল পড়া বন্ধ করতে মেথির গুনাগুন
- চুল পড়া বন্ধ করতে নারিকেল দুধের ব্যবহার
-
চুলের যত্নেপেঁয়াজের রস ও আমলকির ব্যবহার
- লেখকের শেষ কথা
গরম তেল মালিশের মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা
নারিকেল তেল ব্যাবহার করে চুল পড়া বন্ধ করা
আমাদের চুলের যত্নে নারিকেল তেলের ভূমিকা অনেক বেশি। আমরা যদি সঠিক নিয়মে নারকেল তেল ব্যবহার করে থাকি তাহলে অনেক অংশেই চুল পড়া রোধ করা সম্ভব কারণ নারিকেলের তেলের মধ্যে ভিটামিন E সহ অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলকে গোড়া থেকে শক্তি যোগায় |
এছাড়াও মাথার ত্বকে যে কোন চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মাথার ত্বককে কোন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকলে তা প্রতিরোধ করে।
লেবু চুল পড়া বন্ধ করতে কত টা কার্যকরী
চুল পড়া রোধ করার কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে লেবু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। লেবু চুলের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করার পাশাপাশি আপনার মাথার ত্বকে সুস্থ রাখতে পারে । লেবুতে একটি বায়ও একটিভ নামে পরিচিত সিনাপিক অ্যাসিড আছে যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
শ্যাম্পু করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে আপনারা চুল এবং মাথার ত্বকে লেবুর রস লাগান ফলাফল নিজের চোখে দেখতে পাবেন।
অ্যালোভেরা ব্যবহার করে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়ার জন্য সব চেয়ে প্রচলিত প্রতিকার গুলোর মধ্যে অন্যতম উপায় হল অ্যালোভেরা। চুলের যত্নে এলোভেরার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না বললেই চলে। চুলের যত্নে এলোভেরার গুনাগুন নিয়ে অনেক গবেষণা হয় এবং অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
অনেক গবেষণায় দেখা যায় যে এলোভেরা মাথার ত্বক কে প্রশমিত করে চুলকে কন্ডিশনার করে চুলের ফলিকল গুলো খুলে দেয় এবং খুশকি কমায়। আপনারা এলোভেরার সাথে চুলের কন্ডিশনার এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি মাথার ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগাতে পারেন। এলোভেরা ব্লেন্ড করে চুলেএক ঘন্টা লাগিয়ে রাখলে চুলের ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং চুল পড়া রোধ করে এছাড়াও চুলের মাথার ত্বকে চুলকানি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
কোন কোন খাবারের মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা যায়
চিনা বাদাম কাজুবাদাম, কাজুবাদাম এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিশেষ করে ওমেগা ফ্যাট-৬। এটি আমাদের শরীর নিজেই তৈরি করতে পারে না খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে নিতে হয় এই জন্য কাজুবাদাম কাঠ বাদাম চিনা বাদাম এগুলোর খাওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরী। এর মধ্যে যে ফ্যাট রয়েছে তা আমাদের চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও হলুদ ফলমূল যেমন গাজর মিষ্টি আলু মিষ্টি কুমড়া পেঁপে এগুলো তে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায় যা চুলের ফলিকল অর্থাৎ যেখান থেকে চুল বড় হয় সেটার জন্য ভিটামিন এ এর খুব প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রতিদিনের খাবারে হলুদ বা কমলা রঙের ফলমূল বা সবজি রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও ডিম মুরগির মাংস ডাল ছোলা ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা রাখলে চুলের জন্য অনেক উপকার হয়।
আমাদের শরীরে পরিমাণ মতো ভালো খাবার গ্রহণের অভাবে অনেক সময় চুল ঝরে যায় তাই খাওয়ার প্রতিও নজর দেওয়া অনেক জরুরী।সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন প্রয়োজনে বেশি বেশি ভিটামিন ডিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন কারণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের অভাবে অনেক সময় চুল পড়ে যায়।
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার অনেক দিন ধরে চলে আসছে নিম পাতায় থাকা উচ্চমাত্রার ফ্যাটি এসিড্মাথার ত্বকের জন্য উপযুক্ত আর মাথার ত্বক ভালো থাকলে চুলের বৃদ্ধি ভালো থাকে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। আমরা অনেকে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি যাতে আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় বা চুল ভালো থাকে কিন্তু নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানি না নিম পাতা যদি আমরা প্রয়োজন মত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকি তাহলে অনেক অংশ চুল পড়া রোধ করা যায়।
নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহারের ফলে মাথার স্কাল্প অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় নারিকেল তেলের সঙ্গে নিম পাতার রস মিশিয়ে তা যদি মাথার ত্বকের উপরে বা চুলে ব্যবহার করা হয় তাহলে চুল অনেক লম্বা ও হয়ে থাকে। সেই সাথে মাথা ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর হয়ে যায়। ১০ থেকে ১২টি নিমপাতা ও পরিমাণ মতো নারিকেল তেল নিতে হবে। এবার নিম পাতা বেটে রস বের করে নিতে হবে সেই রসটুকু নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকও চুলে ব্যবহার করতে হবে।
এরপর আধাঘন্টা মত শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ও মাথার ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। নিম পাতা মাথার ত্বকে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে।নারিকেল তেল ছাড়াও এখানে আপনি অন্য তেল ব্যবহার করতে পারেন যেমন আমন্ড অয়েল অলিভ অয়েল ইত্যাদি এই তেল গুলোর সঙ্গে ও নিমপাতা রস ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি সপ্তাহে তিন দিন এইভাবে নিমের পাতার রস ও তেল একসাথে মিশিয়ে চুল ও মাথার ত্বকে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার চুল পড়া অনেক কমে যাবে। আর আপনি যেমন চুল চান ঠিক তেমনটাই পাবেন আশা করি নিম পাতা ব্যবহারের ফলে।
চুল পড়া বন্ধ করতে মেথির গুনাগুন
চুল পড়া বন্ধ করতে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হল মেথি মেথি মেথি চুল পড়া রোধে খুব ভালো কাজ করে থাকে কারণ মেথিতে রয়েছে প্রোটিন যা আপনার চুলের গোঁড়া শক্ত করে এবং চুলকে উঠতে বাধা প্রদান করে চুল লম্বা করতে কাজ করে ।
মেথিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন থাকার কারণে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়তে সাহায্য করে এছাড়াও এতে ভিটামিন সি আয়রন ও পটাশিয়াম থাকে এসব উপাদান চুলের অকালপক্কতা রোধের কাজ করে সেই সঙ্গে চুল ঘন কালো মসৃণ করে এবং চুল ওঠা দ্রুত কমিয়ে দেয়।
দুই চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রাখতে হবে এরপর সকালে মেথি বেটে তার সঙ্গে দুই তিন ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে মিশ্রণটি মাথায় রেখে অপেক্ষা করতে হবে আধা ঘন্টার মত এরপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হবে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
আগে থেকে চুল পড়া রোধে মেথির ব্যবহার হয়ে থাকে, বর্তমানে এসেও মেথির ব্যবহার তুমুল জনপ্রিয় তা রয়েছে। আমরা যদি সপ্তাহে একদিন ভালো ভাবে নিয়ম অনুযায়ী মেথি ব্যবহার করে থাকি তাহলে আমাদের চুল পড়া রোধ করা সম্ভব।
চুল পড়া বন্ধ করতে নারিকেল দুধের ব্যবহার
আমাদের চুল ভালো রাখার জন্য নারিকেল তেলের তো কোন তুলনা নেই আমরা তো প্রতিনিয়ত নারিকেল তেল ব্যবহার করেই থাকি ।কিন্তু নারিকেল তেল এর সাথে সাথে আমরা যদি নারিকেল দুধও ব্যবহার করি তা কিন্তু চুলের জন্য অনেক উপকারী নারিকেল দুধ ব্যবহারের মাধ্যমে আরো অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
চুল পড়া বন্ধ করতে নারিকেল দুধ অনেক বেশি কাজ করে থাকে শুধু চুল পড়া বন্ধ করেনা বরং চুল দ্রুত লম্বা করতেও কাজ করে থাকে নারিকেল দুধ।এটিতে কোন প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নেই সুতরাং নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারি চুল মাথার ত্বকের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় নারিকেল দুধ।
চুলের যত্নে নারিকেল দুধ ব্যবহারের জন্য লাগবে একটি নারিকেল ও একটি শাওয়ার ক্যাপ প্রথমে নারিকেল কুরিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি পরিষ্কার সুতির কাপড়ের রেখে চেপে চেপে নারিকেল দুধ বের করে নিতে হবে। এইবার সেই দুধটুকু হালকা গরম করে নিয়ে মাথার ত্বকও চুলে ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে।
এরপর একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে এভাবে ঘন্টা খানিক অপেক্ষা করতে থাকুন। এরপর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেই শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে যদি আমরা সপ্তাহে একবার চুলে নারিকেল দুধ ব্যবহার করে থাকি তাহলে আমাদের চুল যেমন সুন্দর হবে তেমনি চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
চুলের যত্নেপেঁয়াজের রস ও আমলকির ব্যবহার
চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস ও আমলকির ব্যবহার প্রায় সকলেরই জানা পেঁয়াজের রস ও আমলকি আমাদের চুলের যত্নে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ।পেঁয়াজের রস চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে মাথার ত্বকের রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। আরো পড়ুনঃ সুন্নতি চুল রাখার তিনটি নিয়ম-সুন্নতি চুলের কাটিং
আপনার চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী কয়েকটা পেঁয়াজ নিতে হবে এই পেয়াজগুলো খোসা ছাড়িয়ে তার রস বের করে নিতে হবে বের করা রস ছেঁকে নিতে হবে। তারপর পেঁয়াজের রস ভালোভাবে মাথার ত্বক ও চুলে এপ্লাই করতে হবে ।
চুলে পেঁয়াজের রস ব্যবহারের পরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে তিন চারবার এইভাবে যদি পেঁয়াজের রস মাথায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ভালো একটা ফলাফল পাওয়া যায়। চুল পড়ার সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। তাই আমরা বলতেই পারি যে চুলের যত্নে পেঁয়াজের রসের ভূমিকা আসলেই অনেক বেশি।
লেখকের শেষ কথা
বর্তমান সময়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য এখনকার দূষিত পরিবেশে চুল পড়ে যাওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা । নারী ও পুরুষের উভয়ের জন্য চুলের ভূমিকা অতুলনীয়। আমাদের সৌন্দর্যের যতগুলো উপাদান রয়েছে তার মধ্যে চুল হল একটি অন্যতম উপাদান আর এই চুল যদি আমাদের অকালে ঝরে যায় তাহলে দেখতে অনেক খারাপ লাগে এবং সৌন্দর্যের হানি ঘটে।
তাই চুল পড়া রোধে আমরা কি করতে পারি সে বিষয়ে সম্পর্কে উক্ত ব্লগে পরিষ্কার করে ধারণা দেওয়া হয়েছে। আপনারা যদি ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কিভাবে চুল পড়া বন্ধ করা যায় সেই সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন ।প্রিয় পাঠক আর্টিকেল টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে এই বিষয় সম্পর্কে যেকোনো ভালো ভালো কনটেন্ট পেতে আমাদেরকে ফলো করতে থাকুন
ড্রিমস ব্লগারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url