ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী উপায় এবং জীবন যাত্রার টিপস

আমাদের শরীরের ওজন বেশি থাকায় আমরা অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে থাকি। শরীরের বাড়তি ওজনগুলো কিভাবে সহজে কমানো যাবে তার সঠিক গাইডলাইন আমরা কোথাও পাই না। আমরা ওজন কমানোর জন্য কোন কোন ভুলগুলো করে থাকি তা আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না।


তাই আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে খুব সহজেই শরীরের বাড়তি ওজন কমানো যায়। প্রথমে আমি বলব আমরা ওজন কমানোর জন্য যে ভুলগুলো করে থাকি আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো সকাল থেকে খাই আমরা এক বেলার খাবার খেলাম না সকালের খাবার খেলাম না তাহলেই হয়তো আমাদের ওজন কমে যাবে কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চলুন আজকে আমরা জানবো কিভাবে খুব সহজে শরীরের বাড়তি ওজন কমানো যায়।

পেজ সূচিপত্রঃ কিভাবে সহজেই ওজন কমানো যাবে তার সম্পূর্ণ তালিকা

দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য আমাদের সর্বপ্রথম যে কাজটি করা উচিত সেটি হল লিকুইড ক্যালোরি  খাওয়া একদম কমিয়ে দেওয়া। লিকুইড ক্যালোরি হচ্ছে তরল পানির সাথে আমরা যে খাবারগুলো খাই যেমন চা কফি পেপসি কোক বিভিন্ন জুস ইত্যাদি এগুলো সাধারণত আমরা খাবার হিসেবে পছন্দ করি না, মজা লাগে তাই খাই।
আমরা হয়তো জানি না এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। খুব দ্রুত ওজন কমাতে লিকুইড খাবারের উপর আমাদের অনেক মনোযোগী হতে হবে নয়তো শরীরের মেদ কমাতে কষ্টকর হয়ে যাবে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য লিকুইড খাবার কমিয়ে দেওয়া এটা হবে আমাদের ওজন কমানোর প্রথম ধাপ।

দ্বিতীয় ধাপ হলো আমাদের প্রতিবার খাবার খাওয়ার আগে অর্ধ লিটার পানি পান করা। অর্থাৎ আমাদের উচিত খাবার খাওয়ার আগে ৫০০ মিলি পানি খাওয়া। এটা করলে যা হবে অল্প খাবারে পেট ভরে যাবে। এটা গবেষণা তেও দেখা গেছে খাবার খাওয়ার আগে যদি পানি খাওয়া হয় তাহলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ওজন কমানোর জন্য আঁশ যুক্ত খাবার 

শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে আঁশ যুক্ত খাবার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর যুক্ত খাবারের মধ্যে যে খাবারটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটা হল লাল চালের ভাত। লাল চালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার বেশি থাকাতে এটা আমাদের পেটে ধরে থাকে তাই আমাদের ক্ষুধা অনেক কম লাগে।

আরেকটি জটিল বিষয় কিন্তু বুঝিয়ে বললে আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন। সেটা হল আমরা যখন যে কোন খাবার খায় শরীর সেটা ভাঙ্গে এবং খাবারগুলিকে ভাঙতে শরীরের ক্যালরি খরচ হয়। আমরা যখন লাল চাল খাই সেটাতে অনেক ফাইবার থাকে ফলে শরীরে সেটা ভাঙতে বেশি ক্যালরি খরচ হয়। আমরা যখন লাল চালের ভাত খাই আমাদের সব মিলিয়ে শরীরের ক্যালরি জমা পড়ছে কম।

তাহলে  আশা করি বুঝতেই পারছেন লাল চালের ভাত আমাদের দুইভাবে সাহায্য করছে একটি হলো পেটটা অনেক ভরে থাকছে তাই আমাদের ক্ষুধা কম লাগছে দ্বিতীয়টি হল আমাদের শরীরে ক্যালরি জমা পড়ছে কম।

প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা

প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের পরিহার করা উচিত কেননা এরকম খাবারগুলোতে অনেক পরিমাণে ক্যালরি বেশি থাকে আর পোস্টটি অনেক কম থাকে এবং এই খাবারগুলো খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্য এর জন্য যেমন ভালো নয় তেমনি ওজন কমোতেও অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে।

প্রক্রিয়া জাত খাবার কে ইংরেজিতে প্রসেস ফুড বলা হয়। তবে যদি কেউ প্রসেস ফুড খেতে চায় তাহলে সেই ফুলের ব্যাপারে খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে খেতে হবে। তবে পার পক্ষে না খাওয়াই ভালো বিশেষ করে ওজন কমানোর সময় তো খাওয়াই উচিত নয় । 

প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর নাম হল ফুটকা চটপটি বার্গার পিকজা সিঙ্গারা পুরি সমচা সাধারণত এই খাবারগুলো খেলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায় তাই আমাদের উচিত এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকা বিশেষ করে যখন শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চায়। 

ওজন কমানোর জন্য ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার গুরুত্ব

ওজন কমাতে ফলমূল ও শাকসবজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজন কমানোর জন্য শাকসবজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ফলমূল ও শাক সবজিতে কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে এবং ফাইবার ও অনেক বেশি থাকে তাছাড়া পুষ্টিগুণ তো রয়েছেই। এই উপাদানগুলো মিলে আপনার পেট অনেক ভরে থাকবে এবং অনেক পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি খেতে পারবেন।

বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেলে খুব বেশি ক্যালরি শরীরে যাবে না আর অনেক পুষ্টিগুণ ও বেশি পাওয়া যাবে। আমাদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমরা যখন ওজন কমাতে যাই তখন আমরা পুষ্টি থেকে অনেক বঞ্চিত থাকি। শরীরকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করা একদমই উচিত নয়। আমাদের উচিত আমাদের শরীরে যা যা পুষ্টি দরকার আমাদের হার্ট লাঞ্চ কিডনি চোখ ত্বক  লিভার এগুলোর যা যা পুষ্টি দরকার সবগুলোই পুষ্টি আমাদের দেয়া উচিত।

সব ধরনের পুষ্টি আমাদের শরীরে পাবে এবং আমাদের প্রোডাক্টিভিটি অর্থাৎ আমাদের যতটুকু কাজ করা লাগবে সেটা যেন আমরা ভালোভাবে করতে পারি। ওজন কমানোর জন্য শরীরকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত রেখে এরকম কোন পন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। তাহলে আমাদের শরীরের উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

শাকসবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি পেতে হলে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটা হল বিভিন্ন শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি থাকে তাই খাওয়ার সময় কোনটাতে কত পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে সেটা তো আমরা মেপে খাই না তবে আমরা একটা নিয়ম যদি ফলো করি এবং বিভিন্ন রং এর শাকসবজি খায় তাহলে সেখান থেকে আমাদের শরীরের যতটুকু পুষ্টি দরকার শরীরে সেটি পেয়ে যাবে।

ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

ওজন কমাতে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে আর কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা নিজের তার একটি তালিকা দেয়া হলোঃ

০১। শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা 
০২। প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে
০৩। হেলদি প্রোটিন যেমন মাছ ডিমের কুসুম ইত্যাদি
০৪। প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার যেমন চটপটি ফুচকা বার্গার ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা
০৫। সঠিক সময়ে ঘুমানো
০৬। লেবু টমেটো শসা খাওয়া
০৭। নিয়মিত ব্যায়াম করা
০৮। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
০৯। চিয়া সিড খাওয়া
১০। লেবু চা খাওয়া

পেটের মেদ কমানোর উপায়

যদি দ্রুত পেটের মেদ কমাতে চান তাহলে রাতে ভাত এবং রুটি খাওয়া বাদ দিন যতদিন পর্যন্ত না আপনার পেটের মেদ কমে যায়। তাহলে আপনার প্রশ্ন হল আপনি রাতে কি খাবেন আপনি রাতে সবজি খাবেন আপনি রাতে যে সবজিগুলো খাবেন তা হলো বরবটি মটরশুটি সিমের বিচি সালাত ইত্যাদি।

যদি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে সবজি খাওয়ার পরে একগ্লাস পানির ভেতরে এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আশা করা যায় অনেক ভালো ফলাফল পাবেন। আমরা জানি অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের 101 টি গুণাগুণ রয়েছে যার ফলে আমাদের ক্ষুধা অনেক কম লাগে।

যারা অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেন কিংবা পড়াশোনা করেন তারা চিয়া সিড খেতে পারেন। অনেক রাত জাগার ফলে ক্ষুধা লাগতে পারে তাই আপনারা চাইলে চিয়াসিড খেতে পারেন এতে ক্ষুধা নিবারণ হয় এবং ওজনও বাড়ে না। রাতে আমরা যে খাবারগুলো খাই যেমন ভাত রুটি মাছ মাংস ইত্যাদি এগুলো পরিহার করতে হবে।

বাড়তি ওজন কমানোর  ১০ টি কার্যকরি ব্যায়াম

বাড়তি ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি ঝরে যায়। যে ব্যায়ামগুলো করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে যায় নিচে তার তালিকা দেয়া হলোঃ

০১। "SQUAT" ব্যায়াম পায়ের পেশি শক্তিশালী করে
০২। প্ল্যাংক "plank" পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে
০৩। পুশ আপ "push up" এটি বুক এবং বাহুর জন্য
০৪। লেগ রেইজেস "leg raises" এটি তল পেটের জন্য ব্যায়াম
০৫। ত্রাঞ্চেস "crunches" এটি পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে
০৬। হাইনেস "high knees" এটি কার্ডিও ব্যায়াম যার দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে
০৭। জাম্পিং জ্যাকস "jumping jacks" দ্রুত ক্যালরি কমতে সাহায্য করে
০৮। ব্রিজেস "bridges" কোমরের চর্বি কমায়
০৯। বক্স জাম্প "box jump" কার্ডিও ফিটনেস উন্নতি করে
১০। স্প্রিন্টিং"sprinting" দ্রুত ওজন কমাতে এবং ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে

ওজন কমানোর জন্য সেরা খাবার
ওজন কমানোর জন্য সেরা যেই খাবারগুলো নিচে তার তালিকা দেয়া হলোঃ

01. ওটস ্ মিল্ক "oat milk"
02. গমের রুটি
03. শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি ফুলকপি টমেটো লাল শাক পালং শাক ইত্যাদি
04.চিয়া সীড
05. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
06. ডিম
07. গ্রিন টি

ওজন কমানোর জন্য এই খাবারগুলো নিয়ম মেনে খেলে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হয়।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর জন্য কতটা কার্যকরী

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদেরমধ্যে খুবই জনপ্রিয়। শরীরের ওজন ক্রলেস্টেরল রক্তের স্বল্পতা কমানো সহ বহু উপকার করে এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। আপেল থেকে গাজন বা ফার্মানটেশন এর প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়। এই ভিনেগা রে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ এসিড থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী।

এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এ রয়েছে এন্টি এক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ। স্বাস্থ্যকর না না কারণে এ ভিনেগারটিকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসক রাও। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলোঃ

প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার এতে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। এছাড়াও ব্রণ সহ ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন নানা সমস্যার কারণে এই ভিনেগার খুবই কাজের। তাছাড়াও স্কিনের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ঘুমানোর আগে দুই চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে ঘুমালে সকালে রক্তের শর্করা বাড়ার পরিমাণ কমায় ৪ শতাংশ।

শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর আপিল সিডার ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময় সহজে ক্ষুধা লাগে না। রোজ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে। তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে।

শেষ কথা

আশা করি উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে সহজেই ওজন কমানো যায় উপরে আলোচিত এ বিষয়গুলো যদি আপনারা সম্পূর্ণভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে আশা করি এগুলো আপনার ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • 37754 khadiza
    37754 khadiza ৩ নভেম্বর, ২০২৪ এ ৯:৫০ PM

    অনেক সুন্দর

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমস ব্লগারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url