অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় - গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেনঅতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না। কৃমি হওয়ার কারণ কি?
কৃমি হওয়ার লক্ষণ, এবং গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ এবং কিভাবে এর থেকে প্রতিকার
পাবেন তা নিয়ে আমাদের এই পোস্টটিতে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। এই পোস্টটি
পড়ার পর আপনারা খুব সহজে কৃমি হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন।
বাংলাদেশের মানুষের কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
তিনি খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির এক ধরনের পরজীবী যা মানুষের শরীরের মধ্যে বসবাস করে।
শুধু মানুষই নয় যদি গরু ছাগল মহিষ থেকে শুরু করে সকল প্রাণীর দেহে বসবাস
করতে সক্ষম। বিশেষ করে শিশুরা এই কৃমি রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
পেজ সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয়
অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়
অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই এ
পোষ্টটি পড়ার পর কৃমি থেকে বাঁচতে আপনার করণীয় কি হবে তা খুব ভালো ভাবেই
বুঝতে পারবেন। কৃমি থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কি কারনে মানব
শরীরে কৃমি হয়। কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে দূষিত পানি পান
করা, নষ্ট খাবার খাওয়া, হাত ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এগুলোর জন্যই
মূলত কৃমি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ ছেলে সন্তান কত মাসে হয়
আমরা জানি বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিশুরা কৃমি তে আক্রান্ত হয়। কারণ তারা ঠিক মতো
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে চলাফেরা করতে পারে না। শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আরো
একটি কারণ হচ্ছে তারা সবকিছুই মুখে দেয়। আমার অনেক সময় বাচ্চারা মাটিতে
খালি পায়ে হাটে যার ফলে কিছু কিছু কৃমি রয়েছে যেগুলো শিশুদের শরীরে প্রবেশ
করে। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? আপনি যদি কৃমিতে
আক্রান্ত হন তাহলে আপনাকে কৃমি নাশক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
বাজারে অনেক ধরনের কৃমিনাশক ঔষধ পাওয়া যায় সেই ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শে
আপনাকে গ্রহণ করতে হবে বা খেতে হবে। কৃমি হওয়ার ফলে অনেক সময় পুষ্টিহীনতা বা
রক্তস্বল্পতায় ভোগার আশঙ্কা থাকে তাই এটা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে পুষ্টিকর
খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে কৃমি তে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার
থেকে আগে থেকেই তা প্রতিরোধ করার উপায় হল কৃমি থেকে বাঁচার সবচাইতে ভালো
উপায়। আশা করি আপনার অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কি হবে তা বুঝতে পেরেছেন।
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি তা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই ধারণা নেই। গুড়া
কৃমি খুবই বিরক্ত কর এবং অস্বস্তিকর একটি বিষয়। গুড়া কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ
হলো অপরিষ্কার ভাবে জীবন পরিচালনা করা। যারা হাতের নখ বড় রাখে তাদের
গুড়া কৃমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার যারা স্যাঁতস্যাঁতে
জায়গাতে বসবাস করেন তাদেরও গুড়া কৃমি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
আবার যারা প্রতিদিনই প্রায় হোটেলের খাবার খায় তারাও এই গুড়া কৃমিতে আক্রান্ত
হয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা্রগুড়া কৃমি হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে তা হল পরিবারে সবাই মিলে একত্রে
একটা টয়লেটি ব্যবহার করা এর কারণেও কিন্তু গুড়া কৃমি হয়ে থাকে। গুড়া কৃমি
কীভাবে ছড়ায় আপনি জানেন কি? গুড়া কৃমির ছড়াই হলো মুখ, হাত, এবং মলদ্বারের
মাধ্যমে। গুড়া কৃমি থেকে মুক্তি পেতে করণীয় কি এটা জানা খুবই জরুরী। গুড়া
কৃমি থেকে মুক্তি পেতে হলে সব সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
বাহিরের কোন প্রকার খাবার খাওয়া যাবেনা নখ বড় রাখা যাবে না।
শুধু আপনি পরিষ্কার থাকলেই হবে না। আপনার পরিবারের সকল সদস্যকে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আপনি যাদের সাথে চলাফেরা করেন তাদেরকেও পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যদি তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় তাহলে তাদেরকে
সচেতন করতে হবে। কারণ গুড়া কৃমি এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। একজনের কাছে থেকে অন্য
জনের কাছে খুব সহজেই সংক্রমণ করতে পারে। আর প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার আগে
হাত মুখ ভালো হবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
বড়দের কৃমি হওয়ার কারণ
বড়দের কৃমি হওয়ার কারণ কি তা সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটিতে বিস্তারিত ভাবে
আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে কৃমি হয়নি এরকম মানুষের সংখ্যা খুজেই পাওয়া যাবে না।
কৃমি হওয়ার কারণ মূলত আমরা যখন বাজার থেকে ফল বা কোন সবজি নিয়ে আসি সেগুলোকে
ভালোভাবে না ধুয়ে খেয়ে ফেলি এই ভালোভাবে না ধুয়ে খাওয়ার ফলে আমাদের কৃমি
হয়ে থাকে। কৃমি গ্রামাঞ্চলের মানুষের বেশি হয়ে থাকে তার কারণ হলো
গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা তাদের গরু-ছাগলের বিষ্ঠা হাতে নেয় কিন্তু হাতে ভালোভাবে
সাবান দেয় না যার ফলে ক্রিমি হয়ে থাকে।
বড়দের কৃমি হওয়ার আরেকটি কারণ মূলত শাকসবজি বা যে কোন খাদ্যকে ভালোভাবে সেদ্ধ
না করে খাওয়া। আবার বাইরে খাওয়া দাওয়া করার মাধ্যমে কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। অনেকেই হাতের নখ বড় রাখেন যার ফলে কৃমি রোগ
হয়ে থাকে। আবার খালি পায়ে মাটিতে হাঁটাচলা করলেও কৃমি রোগ হয়। বড়দের
কৃমির রোগ হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ হলো অপরিষ্কার ভাবে চলাফেরা এবং সতর্কতা
না হওয়া।
বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারন কি
বড়দের ঘনঘন কৃমি হওয়ার কারণ কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না। বড়দের ঘন ঘন কৃমি
হওয়ার কারণ হলো অপরিষ্কারভাবে চলাফেরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করা, বাহিরের খাবার বেশি খাওয়া, খাওয়ার আগে
ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করা, শাকসবজিকে ভালোভাবে সিদ্ধ না
করে খাওয়া, বাইরের বা হোটেলের খাবার বেশি খাওয়া, অপরিষ্কার মানুষের সাথে
চলাফেরা করা, বাড়ির সবাই মিলে একটা টয়লেট ব্যবহার করা।
কৃমি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও ডাক্তারের কাছে না যাওয়া ও ওষুধ সেবন না করা।
কৃমি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সচেতন না হওয়া। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন
হয়ে থাকা, সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার সচেতন না করা, এই কারণগুলোর
জন্যই মূলত বড়দের ঘর ঘন কৃমি হয়ে থাকে। কেউ যদি কৃমিতে আক্রান্ত হয় তাহলে
তার উচিত দ্রুত স্থানীয় কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী কৃমির ওষুধ সেবন করা। এবং দৈনন্দন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
বড়দের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
বড়দের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সাধারণভাবে বড়রা
যারা কৃমিতে আক্রান্ত হন তাদেরকে মূলত এল্মিন ডি এস নামক ওষুধ খেতে দেওয়া
হয়। এই ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হলো আপনাকে নিজে একটা খেতে হবে এবং পরিবারের
সবাইকে একটি করে খাওয়াতে হবে। সবাইকে খাওয়ানোর কারণ হলো কৃমি এক ধরনের
সংক্রমিত রোগ যার জন্য পরিবারের কারো মধ্যে একজনার থাকলে সহজেই সবার মাঝে
ছড়িয়ে পড়ে।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
তাই আপনি যখন কৃমির ওষুধ খাবেন পরিবারের বড়দের সবাইকে একটি করে খাওয়াইয়া
দিবেন। তারপরে সকলকে ওষুধ খাওয়ানোর পরে সবার ঘরের বিছানা চাদর সাবান দিয়ে খুব
ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন। সাধারণত তিন মাস পর পর এই ট্যাবলেট টি একবার করে
খেতে হয়। অথবা আপনি চাইলে প্রতি মাসে একটি করে খেতে পারেন। তবে এই ওষুধ
বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো যাবে না। আপনি যদি বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে চান তাহলে
তাদের জন্য আর একটি ওষুধ রয়েছে তা হলো মেলফিন।
মেলফিন ছোট একটি সিরাপ যার দাম মাত্র ২০ টাকা। এটি আপনার স্থানীয় কোন ঔষধের
দোকানে কিনতে পারবেন। এই সিরাপ দুই বছরের নিচে বাচ্চাদের কে খাওয়ানো যাবে
না। অর্থাৎ দুই বছরের উপরে বাচ্চাদেরকে আপনি এই সিরাপটি খাওয়াতে পারবেন।
সিরাপটি ভালোভাবে থাকিয়ে বাচ্চাকে পুরোটাই খাওয়ায়ে দিতে হবে। তবে
সবথেকে বেশি ভালো হবে আপনার যখন কৃমি রোগ হবে তখন স্থানীয় কোন ডাক্তারের কাছে
যাওয়া এবং তার থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা।
কৃমির ওষুধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম
কৃমির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না।
চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই কারণ আমরা এখন কয়েকটি কৃমির
ওষুধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আপনাদেরকে জানাবো।
বাংলাদেশে কৃমি রোগ একটি বহু আলোচিত একটি সমস্যা। বাংলাদেশে এমন কোন মানুষ নেই
যে কখনো কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়নি। কৃমি রোগ হওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন
ধরনের সমস্যা দেখা যায় বিশেষ করে যারা কৃমি রোগে আক্রান্ত হন তারা
পুষ্টিহীনতায় ভুগেন। জেনে নিন কয়েকটি কৃমি রোগের ওষুধের নাম ও খাওয়ার
নিয়ম।
মেবেনডাজলঃ এটি একটি অ্যান্টি প্যারাসিটিক ঔষধ যা কৃমিরোগ দূর করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ওষুধটি দুই বছরের উপরে সবাইকে খাওয়ানো যাবে। এই
ওষুধ দিনে একবার করে সেবন করতে হবে। তারপর থেকে দুই তিন দিন পর পর এই
ওষুধটি একবার করে খেতে পারেন যতদিন না পর্যন্ত কৃমি রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি
না পান। ২০১৫ সালে এক গবেষণায় মেবেনডাজলের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা
বিশ্লেষণ করা হয়, যেখানে এটি বিভিন্ন ধরনের কৃমি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী
হিসেবে প্রমাণিত হয়।
অ্যালবেনডাজলঃ এই ওষুধও অ্যান্টি প্যারাসিটিক ওষুধ যা কৃমি রোগ থেকে
সুস্থ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ওষুধটিও দুই বছরের উপরে সবাইকে
খাওয়ানো যেতে পারে। এই ওষুধ দিনে একবার খেতে হয় এবং তিন দিন পর্যন্ত এই ওষুধ
খেতে হয়। তবে গর্ভবতী মহিলাদের এ ওষুধটি না খাওয়াই ভালো।২০১৭ সালে একটি
গবেষণায় দেখা গেছে যে আল্বেনডাজল অ্যাস্ক্যারিস এবং
হুকওয়ার্ম সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
নেটামোডঃ এই ওষুধটিও কৃমি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে খাওয়ানো
হয়। এই ওষুধটি দিনে একবার খেতে হবে এবং এভাবে তিন থেকে পাঁচ দিন প্রতিদিন একটা
করে ট্যাবলেট খেতে হবে। নেটামোড কৃমির জন্য একটি কার্যকরী ওষুধ হিসেবে প্রমাণিত
হয়েছে, বিশেষত টেনিয়া এবং এনকিফ্যালিড এর ক্ষেত্রে। আশা
করি এই আলোচনা থেকে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আরো জানতে
এখানে ক্লিক করুন।
শেষ মন্তব্যঃ অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয়
অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কি তা সম্পর্কে আপনার খুব ভালোভাবে জানতে
পেরেছেন। কৃমি হওয়া সাধারণত অপরিষ্কার জীবনযাপন, নষ্ট খাবার ও পানি পানের
কারণে হয়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। কৃমি থেকে মুক্তি পেতে
কৃমিনাশক ওষুধ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন।
মেবেনডাজল, আল্বেনডাজল, এবং নেটামোডের মতো কার্যকরী ওষুধের সাহায্যে কৃমি
নির্মূল করা সম্ভব।
প্রিয় পাঠক আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই
পোষ্টের নিচে একটি খুব সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্য করতে ভুলবেন না। কারণ হতে পারে
আপনার একটি গঠনমূলক মন্তব্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আর আমাদের এই পোস্টটি যদি
আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন যাতে
অন্যরা উপকার পায়। আর প্রতিদিন এরকম নিত্য নতুন কন্টেন্ট করার জন্য আমাদের এই
ওয়েবসাইট টিকে ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
ড্রিমস ব্লগারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url