সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম - উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড খেলে কি হয়সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম আমাদের অনেকের অজানা। আজকের উক্ত আর্টিকেলে আমরা এটি খাওয়ার নিয়মের পাশাপাশি এটি কি ধরনের পাতা, খেলে কি কি উপকার মেলে, আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু গ্রহণ করা উচিত এই সকল বিষয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ এই পাতার সাথে পরিচিত এই সজনে পাতা শাক হিসেবে খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সজনে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেকে জানে না যে সজনে পাতা আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়।
পেজ সূচিপত্রঃ সজনে পাতার গুঁড়া খাওয়ার নিয়ম
- সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম
- ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতা গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস কমার খাদ্য হিসেবে সজনে কতটা ভালো
- কিডনি রোগী কি সজনে পাতা খেতে পারবে
- সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতার অপকারিতা
- সজনে পাতার রসের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতার ৬ টি বিশেষ উপকারিতা
- সজনে পাতার চায়ের উপকারিতা
- সজনে পাতার গুড়া কি গ্যাস দূর করে
- শেষ কথা
সজনে পাতার গুঁড়া খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম হয়তো আমরা অনেকে জানিনা তবে এটা চিনি না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।কেননা এটি সকল জায়গায় প্রায় দেখা যায়। সজনে এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ যাকে আমরা সাধারণত সবজি হিসেবে বেশি চিনে থাকি। তবে এর পুষ্টিগুণ এত বেশি যে অন্যান্য সকল সবজির চেয়ে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। একে মাল্টিভিটামিন এর আধার বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সজনের ডাটার চাইতে এর পাতার গুনাগুন আরো অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এটির গুনাগুন এত বেশি যে সারা বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা এটিকে মরিঙ্গা পাউডার বলা হয়। সজনে পাতার পাউডারে অকল্পনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। যা আমরা প্রতিনিয়ত যেগুলো খাবার খায় তার চাইতে অনেক অনেক বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যামিনো এসিড , ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিনেএ, ভিটামিন সি সহ আরো অনেক উপাদান রয়েছে। নিচে সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম আলোচনা করা হলো।
চায়ের সাথে মিশিয়েঃ সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার সবচাইতে একটি অন্যতম সহজ পদ্ধতি হলো চায়ের সাথে এটি মিশিয়ে পান করা। কেননা যখন সজনে পাতার গোড়া চায়ের সাথে মেশানো হয় তখন তার সকল পুষ্টিগণ পানির সাথে মিশে যায়।আর যখন সে পানীয় গ্রহণ করা হয় তখন তার সকল পুষ্টি উপাদান দেহের ভেতরে প্রবেশ করে।
শরবত বানিয়েঃ সজনে পাতার গুড়ার সঙ্গে অনেক সময় খাঁটি মধু ও লেবু পানি মিশিয়ে অনেক স্বাস্থ্যসম্মত শরবত তৈরি করা যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমরা যদি নিয়মিত এই শরবত গ্রহণ করে থাকি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে সে সাথে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
ওটমিল এর সাথেঃ সজনে পাতার গুড়া যদি ওটমিলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে আরো পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। কোননা কোন ব্যক্তি যদি ওট মিল তার ডায়েটে রাখে তাহলে তার সাথে মরিঙ্গা পাউডার কিছুটা মিশিয়ে নিলে সে খাবারের পুষ্টি মান দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটা খাবার তৈরি হয়।
স্যুপের সাথেঃ সাধারণত সুপের সাথে বিভিন্ন উপাদান যোগ করা হয় তার পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য। সে ক্ষেত্রে যদি আমরা স্যুপের সাথে মরিঙ্গা পাউডার অ্যাড করি তাহলে এটি আমাদের জন্য খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে। কেননা স্যুপের সাথে এটি ব্যবহারের ফলে সুপের গুনাগুন আরো বৃদ্ধি পাবে যা আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে।
মসলা হিসেবেঃ আমরা কোন খাবার রান্না করার সময় অনেক মশলা ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে যেকোনো ভাজি পপকন ইত্যাদির সাথে মসলা হিসেবে সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার করি তাহলে এটি দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে খেতে ভালো লাগবে আবার উপকারও পাওয়া যাবে।
সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। অনেকে প্রশ্ন করে থাকে সজনে পাতার গুড়া করব কিভাবে? বাড়িতে কি সজনে পাতা গুড়া করা যায় এরকম নানান রকমের প্রশ্নই অনেকে করে থাকেন তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব হ্যাঁ সুজনে পাতা বাড়িতেই খুব সহজে গুঁড়ো করতে পারবেন। কিভাবে সজনে পাতা বাড়িতে গুঁড়া করবেন চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সজনে পাতা গুড়ো করার জন্য আপনাকে খুব সুন্দর ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সজনে পাতা ধোয়ার জন্য আপনি একটি ঝুড়ি নিয়ে নিন। ঝুড়ির মধ্যে সজনে পাতাগুলোকে রেখে দিন তারপর পাতাগুলোকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে ফেলার পর রেখে দিন যতক্ষণ পর্যন্ত না পাতাগুলো শুকাচ্ছে। কারণ ভেজা অবস্থায় যদি আমরা এটাকে রোদে দিই তাহলে পাতাগুলো কিন্তু পচে যাবে তাই অবশ্যই আপনাকে পানিগুলো ঝট কে নিতে হবে।
পানি ঝটকানো হয়ে গেলে পাতাগুলো কে আপনি চাইলে রোদেও শুকাতে পারেন অথবা চুলার নিচেও শুকাতে পারেন। পাতাগুলোকে একদম ভালো করে শুকিয়ে তারপর সেগুলোকে ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিতে হবে যদি ভালোভাবে পাতাগুলো না শুকায় তাহলে কিন্তু গুড়া হতে সমস্যা হবে। তাই আপনাদের অবশ্যই পাতাগুলোকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। আর এভাবেই আপনি বাড়িতে খুব সহজেই সজনে পাতার গুঁড়া তৈরি করতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার গুঁড়া খাওয়ার নিয়ম
ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম আসুন জেনে নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতা গুড়া অত্যাধিক উপকারী। যদি নিয়ম করে ডায়াবেটিস রোগীরা এটির গুঁড়া সেবন করে থাকে তাহলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। সে ক্ষেত্রে সজনে পাতার পাউডার এক চামচ নিতে হবে এবং এক গ্লাস পানির সাথে ভালোভাবে নি মিশিয়ে খেতে হবে।
আবার কেউ চাইলে ফুটন্ত গরম পানিতে সজনে পাতার গুড়া দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। যে যেমন ভাবে খেতে পছন্দ করেন তেমনভাবে খেতে পারেন কোন সমস্যা নেই। সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণ থায়োসায়ানেট থাকে। যার ফলে সজনে পাতা খাওয়া হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। ৩০ জন মহিলার উপর গবেষণা করা থেকে দেখা যাচ্ছে মহিলারা তিন মাস ধরে প্রতিদিন ৭ গ্রাম সজনে পাতার গুড়ো খেলে ফ্লাসটিং ব্লাড সুগার গড়ে ১৩. ৫% করে কমে।
ছয় জন মানুষের উপর করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সজনে পাতা খাওয়ার পরে ২১% পর্যন্ত ব্লাড সুগার কমে। প্রাণীর উপর করা আরো কিছু গবেষণা করা থেকেও দেখা যাচ্ছে সজনে পাতা ব্লাড সুকার কমাতে সাহায্য করে। এগুলো থেকে বুঝতে পারছেন সজনে পাতা নিয়ে গবেষণা থাকলেও বড় বা অনেক বেশি মানুষের উপর গবেষণা করা সেরকম ভাবে নেই। তারপরেও যেই গবেষণাগুলো রয়েছে তা থেকে বোঝা যাচ্ছে সজনে পাতা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস কমানোর খাদ্য হিসেবে সজনে কতটা ভালো
ডায়াবেটিস কমানোর খাদ্য হিসেবে সজনে কতটা ভালো তা এই আলোচনার মাধ্যমে খুব সহজেই জেনে যাবেন। প্রথমে একটা কথা বলে রাখি ডায়াবেটিস কমাতে সজনের ভূমিকা এতদিন আপনাদের যে ধারণা ছিল তার বেশির ভাগই তো ভুল। আর সেই ভুলের ফাঁদে পড়েই আপনার ব্লাড সুগার কমানো সহজ হচ্ছে না। সজনে ডাটা নিয়ে মানুষের খুব আগ্রহ রয়েছে শুধু তো আগ্রহ থাকলেই হবে না তা ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।
শুধু সজনে ডাটা নয় সজনে পাতা সজনে মূল আপনি সবগুলোই খেতে পারেন। এবার শুধু দেখতে হবে ডায়াবেটিস খাদ্য হিসেবে কোনটা কতটুকু ভালো। সজনে নিয়ে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে সজনে যদি ডায়াবেটিস খাবার হিসেবে ভালো ফলাফলও করে তবুও তা ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারবেন কিনা সেটাতেও সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের বিষয়ে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। সজনের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
তাই সজনে পাতার গুড়া বাজারেও বিক্রি হয়। তবে আমাদের জানা দরকার সজনে পাতার গুঁড়ো সুগার কমাতে কোন ম্যাজিক দেখাতে পারে কিনা। সজনে ডাটা নাকি সজনে পাতা কোনটা বেশি ভালো অনেকের এরকম প্রশ্ন চলুন জেনে নেওয়া যাক। আমরা সজনে ডাঁটা ও সজনে পাতাকে সাতটি প্যারামিটারে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবো। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রথম শর্ত হলো লোগ লাইসেমিক ইনডেক্স ও লোক লাইসেমিক লোড।
সজনে পাতা ও সজনে ডাটা দুটোই লোগ লাইসেমিক ইনডেক্স দশের কম এরমধ্যে সজনে ডাটার লাইসেমিক ইনডেক্স কিছুটা কম। আপনি সজনে ডাটা খান বা সজনে পাতা খান আপনার ব্লাড সুগার স্পাইক দেখা যাবে না। মানে সুগার কমানো খাবারের প্রথম শর্তে সজনে পাতা সজনে ডাটা দুটোই এগিয়ে থাকবে। ডায়াবেটিস কমানোর দ্বিতীয় শর্ত হলো লো নেট কার্বোহাইড্রেট ও হাই ফাইবার।
নেট কার্বোহাইড্রেট হলো সেই কার্বোহাইড্রেট যা আপনার ব্লাড সুগার বাড়াবে। মানে খাবারের কার্বোহাইড্রেট কি আপনি ব্লাড সুগারের জ্বালানি বলতে পারেন। ফলের সুগার রোগীর খাবার তালিকায় কোন খাবার যোগ করার আগে তার নেট কার্বোহাইড্রেট কত তা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। নেট কার্বোহাইড্রেট যদি ব্লাড সুগারের গাড়ির জ্বালানি হয় তবে ফাইবার কে আপনি গাড়ির ব্রেক বলতে পারেন। খাবারের মধ্যে যত ফাইবার থাকবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তত সহজ হবে।
১০০ গ্রাম সজনে ডাঁটা থেকে আপনি নেট কার্বোহাইড্রেট পাবেন প্রায় ৫ গ্রাম ও ফাইবার পাবেন প্রায় তিন গ্রাম। স্বপ্নে ডাটাতে নেট কার্বোহাইড্রেট পরিমাণে কমই এবং ফাইবার একটু বেশি থাকে। সামগ্রিকভাবে সজনে ডাটার কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার আপনার সুগার বাড়াবে না। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন ডায়াবেটিস কমানোর খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা বা সজনে ডাটা কতটা ভূমিকা রাখে।
কিডনি রোগীরা কি সজনে পাতার গুড়া খেতে পারবে
কিডনি রোগীরা কি সজনে পাতার গুড়া খেতে পারবে? এটা অনেকের প্রশ্ন থাকে। সজনে পাতার গুড়া অনেক উপকারী হলেও কোন কোন চিকিৎসক কিডনি রোগীদের এটি খেতে নিষেধ করে থাকেন।কেননা কিডনি রোগীদের পটাশিয়াম, ফসফরাস , এবং প্রোটিন রেস্ট্রিক্টেড করা হয়। আর অপরদিকে সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন থাকে।
আরো পড়ুনঃ বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
তাই সুস্থ মানুষের জন্য সজনে পাতার গুড়া অত্যাধিক উপকারী হওয়া সত্ত্বেও কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলা উত্তম।কিন্তু সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে কিডনির সুরক্ষায় এ সজনে পাতার গুড়া ব্যাপকভাবে কার্যকরী। সজিনা পাতার গুড়া তুলনা মূলক একটু দাম বেশি হয়ে থাকে তারপরেও সাধ্যের ভেতরেই মোটামুটি বলা যায়।
সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা
সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা অনেক বেশি। আমরা অনেক আগে থেকেই জেনে আছি যে সজিনা পাতার গুড়াকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি খেলে আমাদের কি কি উপকার হয় আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। আরো বিস্তারিত করতে এখানে ক্লিক করুন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ সজনে পাতার গুড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটির মধ্যে অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল ধরনের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।
হজম বৃদ্ধি করেঃ সজনে পাতার পাউডারে আঁশ থাকে যার কারণে এটি খাদ্য হজম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারদের হজমে সমস্যা রয়েছে তাদের খাদ্য তালিকাই মরিঙ্গা পাউডার রাখতে পারেন।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ মরিঙ্গা পাউডার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস এবং হার্ট ভালো থাকে। তাই সকল সুস্থ মানুষেরও খাদ্য তালিকায় এটি যোগ করা উচিত।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি শারীরিক দুর্বলতা তখনই দেখা দেয় যখন শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। আর মরিঙ্গা পাউডারে এমন পুষ্টি রয়েছে যা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ব্যাপকভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ সজনে পাতার পাউডারে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকার জন্য তা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের ব্লাড প্রেসার বেশি তারা অবশ্যই খাবারের তালিকায় সজনে পাতার গুড়া রাখতে ভুলবেন না। এছাড়াও কোলেস্টরেল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি ভূমিকা পালন করে থাকে।
সজনে পাতার গুড়ার অপকারিতা
সজনে পাতার গুড়ার অপকারিতা ও রয়েছে হয়তো তা আমরা অনেকে জানি না। আসুন জেনে নেওয়া যাক সজনা পাতার গোড়ার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং কাদের জন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম এর পাশাপাশি এর অপকারিতা ও জানা প্রয়োজন। পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম যেমন অনেক রয়েছে ঠিক তেমনি সজনে পাতার গুড়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে। প্রত্যেক জিনিসেরই ভালো গুণের পাশাপাশি কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্যঃ সজনে পাতার গোড়া ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এছাড়াও অন্যান্য উপকারী উপাদানে ভরপুর। তারপরেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এটা অনেক সময় প্রজনন বিরোধী হয়ে থাকে।
থাইরয়েড চিকিৎসার ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়া থাইরয়েডের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও যখন থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা চলে তখন এর ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা ওষুধের সাথে আবার যদি সজনে পাতার গুড়া একসাথে খাওয়া হয় তাহলে ওষুধ আর এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়া খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই যদি অধিক মাত্রায় কেউ এটি গ্রহণ করে থাকে তাহলে অনেক সময় ডায়াবেটিস একেবারে কমিয়ে ফেলতে পারে তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রক্তচাপ ওষুধের জন্যঃ রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সজনে পাতার গুড়া অতিরিক্ত ভালো কাজ করে থাকে। তবে ঔষধ চলাকালীন সময়ে যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে অনেক সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে ওষুধ চলাকালীন এটি এড়িয়ে চলা ভালো।
সজনে পাতার রসের উপকারিতা
সজনে পাতার রসের উপকারিতা অনেক রকমের রয়েছে। সজিনা পাতার জুস খেলে বা রস খেলে আমরা অনেক ভাবে উপকার পেয়ে থাকি।কেননা এটাকে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অপুষ্টি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন ব্যক্তি যদি শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করে তাহলে সজনে পাতার রস খেলে তার দুর্বলতা কেটে যাবে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
বড়দের পাশাপাশি ছোটদের ক্ষেত্রে ও সজনে পাতার রস ভালো কাজ করে থাকে। যদি ছোট বাচ্চাদের সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয় তাহলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয় এবং এর চাটনি হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে থাকে। সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে।
কেউ যদি প্রতিদিন সজনে পাতার রস খেয়ে থাকে তাহলে তার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে না কারণ প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট। সজনে পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে সজনে পাতায় আরও রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রো বিয়াল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যৌগ যা বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা অনেক বেশি। কেননা গর্ভকালীন সময়ে সজনে পাতার গুড়া খুবই উপকারী কারণ এতে আমিষ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, থাকে যা দেহের জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে অন্যতম পুষ্টি উপাদান। কোন মহিলা যদি ছয় চা চামচ সজনে পাতার গুঁড়া প্রত্যেকদিন তার খাদ্য তালিকায় রাখে তাহলে সে সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবে।
কেননা সজনে পাতায় বিশেষ ধরনের গুণাগুণ রয়েছে। এতে দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম, ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও জিংক রয়েছে। সজনা পাতার গুড়ার মধ্যে শরীরের ক্লান্তি ও ব্যথা দূর করার মতো এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের ব্যথা ও ক্লান্তি দূর করতে পারে। এটি মায়ের দুধের পরিমাণও বাড়িয়ে থাকে। তাই গর্ভ অবস্থায় সজনে পাতার গুড়া খেলে স্তন্যদানকারী মায়ের সকল পুষ্টির উপাদান মিটে থাকে।
সজনে পাতার ৬ টি বিশেষ উপকারিতা
সজনে পাতার ৬ টি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনিও অবাক হবেন। শুনে পাতার বিশেষ কোন বা উপকারিতার মধ্যে প্রথমে যেটি রয়েছে তা হলো মরিঙ্গা বা সজনে একটি অতিশয় পুষ্টিকর বৃক্ষ জাতীয় গাছ। নর্থ ইন্ডিয়া তে প্রচুর পরিমাণে এই গাছটি পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ফলিক এসিড, পাইরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬ প্রচুর রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
আমাদের শরীরের যে জটিল রাসায়নিক ক্রিয়া চলে প্যানক্রিয়াই অগ্নাশয় ও লিভারে সেগুলোতেও উপরে যে ভিটামিন ও মিনারেল গুলোর কথা বললাম সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১ গ্রাম মরিঙ্গাতে ২১ গ্রাম বায়োকটিভ থাকে কম্পরেন্ট থাকে দুই গ্রাম থাকে প্রোটিন ভিটামিন বী৬ থাকে ১৯ পার্সেন্টের মত ভিটামিন সি থাকে ১২ পারসেন্ট এর মত আয়রন থাকে ১১ পারসেন্ট এর মত তাছাড়াও রাইবোফ্লাবিন ভিটামিন এ ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। তাই এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
আমরা যে খাবারগুলো খাই সেই খাবারগুলোর পুষ্টিগণ সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। অনেক সময় আমাদের খুবই নিম্নমানেরও খাবার খেতে হয়। তাই খাবারের মধ্যে আমরা যদি সজনের কোন জিনিস ঢুকিয়ে দি যেমন সজনে পাতা সিদ্ধ করে তরকারির মধ্যে দিলাম বা সজনে ডাটা রান্না করে খেলাম কিংবা সজনের ফুল ভাজি করে খেলাম তাহলে আমাদের প্রোটিন ভিটামিন এ ভিটামিন বি আয়রন ম্যাগনেসিয়াম গুলো এই খাবার থেকে পেয়ে যাব। সজনে পাতার বিশেষ ছয়টি উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো।
- সজনে পাতাতে অনেক পুষ্টি রয়েছে।
- সজনে পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতা হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে
- সজনে পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
- সজনে পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে
সজনে পাতার চা এর উপকারিতা
সজনে পাতার চা এর উপকারিতা অনেক বেশি। সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম নিয়ম। রোজ নিয়ম করে যদি কেউ সজনে চায়ে চুমুখ দেয় তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে।রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সজনে পাতার চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় তাই এটির জুড়ি মেলা ভার।
সজনে পাতার গুড়া দিয়ে চা বানিয়ে পান করলে চোখ ভালো রাখতে খুবই সাহায্য করে থাকে। কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে যখন দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তাছাড়া সারাক্ষণ মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অল্প বয়সে যখন চোখের সমস্যা দেখা দেয় তখন সজনে পাতার চা এর উপকারিতা অনেক বেশি বোঝা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও রয়েছে। তাই আমরা সকালে দুধ চা এর পরিবর্তে সজনে পাতার গুড়া দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করব।
সজনে পাতার গুড়া কি গ্যাস দূর করে
সজনে পাতার গুড়া কি গ্যাস দূর করে এটা আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। সজনে পাতা গুড়া খাওয়ার নিয়ম অনেক ধরনের রয়েছে। প্রায় ছোট বড় সকল মানুষই গ্যাসের সমস্যায় জর্জরিত। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সব চাইতে মানুষ গ্যাসের ওষুধ বেশি কিনে থাকে। কেননা গ্যাসের সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে এটি কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে আমরা দূর করতে পারি সজনে পাতা গুড়ার মাধ্যমে।
যখন কোন প্রাপ্তবয়স্ক বা ছোট বাচ্চার গ্যাসের সমস্যা দেখা দেবে সে ক্ষেত্রে সজনে পাতার রস বের করে এতে সামান্য লবণ মিক্স করে খেলে গ্যাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এই পদ্ধতি বড়দের চাইতে ছোটদের জন্য বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে।যাদের কষ্ট কাঠিন্য রয়েছে বা হজমে শক্তি কম তারাও সজনে পাতার গুড়া খেলে ভালো উপকার পেয়ে থাকবেন। যার ফলে পেটের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। তাই সুস্থ অবস্থায় ও সর্বদা সজনে পাতার গুড়া খাওয়া উচিত কেননা এটি পুষ্টির আধার।
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: সজনে পাতা খেলে কী ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায়?
উত্তর: সজনে পাতায় ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং আয়রনসহ আরো অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে
প্রশ্ন ২: সজনে পাতা কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়?
উত্তর: হ্যাঁ সজনে পাতাতে অনেক ফাইবার থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
প্রশ্ন ৩: সজনে পাতা কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?
উত্তর: জি হ্যাঁ সজনে পাতার রস রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রশ্ন ৪: সজনে পাতা কি হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে?
উত্তর: সজনে পাতায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৫: সজনে পাতা কি ত্বকের জন্য উপকারী?
উত্তর: হ্যাঁ কারণ সজনে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের বাড়াতে সহায়তা করে এবং বার্ধক্যর ছাপ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন ৬: সজনে পাতা কি হজম শক্তি বাড়ায়?
উত্তর: সজনে পাতার মধ্যে অনেক ফাইবার থাকে হজম শক্তি উন্নত করে সাহায্য করে।
শেষ কথাঃ সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং সজনে পাতার অবর্ণনীয় উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এটি কিভাবে খেতে হয় সে বিষয়টি উক্ত আর্টিকেলে সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা আপনাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সজনে পাতার গুড়া রাখতে ভুলবেন না কেননা এটি অনেক পুষ্টিকর ও উপকারী।
সজনে পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকার জন্য একে ডিনামাইট বা সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ন্যূনতম উপকার হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের সার্থকতা। আমরা সর্বদা আমাদের লেখনীর মাধ্যমে আপনাদের অজানা বিষয়কে জানানোর চেষ্টা করে থাকি। তাই সর্বদা এ ধরনের আর্টিকেল পড়তে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে থাকুন ধন্যবাদ সবাইকে।
Helpful