সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

রাতে কালোজিরা খেলে কি হয়সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক আছে কিনা এটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে যাদের মনে প্রশ্ন থাকে তাদেরকে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কারণ আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক সরিষার তেলের উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
সরিষার-তেলের-ক্ষতিকর-দিক
সরিষার তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এরিউসিক এসিড থাকে যা অনেক সময় ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে। যখন ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি হয়ে যায় তখন কিডনিতে পাথরের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি ছাড়াও আরো অনেক ক্ষতিকর দিক ও উপকারী দিক রয়েছে আসুন সরিষার তেল সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নেই। 

পেজ সূচিপত্রঃ সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক দিক নিয়ে আজকের এই আলোচনা। প্রতিটি জিনিসেরই ভালো দিকের পাশাপাশি অবশ্যই কিছু খারাপ দিক রয়েছে তবে কোন ক্ষেত্রে ভালো দিক বেশি এবং কোন ক্ষেত্রে খারাপ দিকের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। খারাপ দিকগুলো অবশ্যই মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।আমরা প্রতিনিয়ত যে সরিষার তেল রান্না থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি সেই তেলের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, সরিষার তেল মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ পিত্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। যদি মানব শরীরে পিত্ত বড় হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।এটি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক সময় জ্বালাপোড়া করে জ্বর এবং তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। সরিষার তেল চোখে মুখে ব্যবহার না করাই ভালো কারণ দেখা যায় যে অনেক সমীক্ষায় সরিষার তেল মুখে ব্যবহার করার জন্য ত্বকের ক্ষতি ছাড়া চোখে জ্বালাপোড়া করে থাকে। 

কেউ যদি রাধিকা প্রকারের সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে তাহলে তার বন্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করলে এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তবে এলার্জি সমস্যাটা একাক ব্যক্তির এক এক রকমের হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তির এলার্জি যেকোনো খাবার যে কোন জিনিস থেকে হতে পারে । এটি খুবই একটি সাধারণ বিষয়। তাই কারো ক্ষেত্রে আবার সরিষার তেল এলার্জির সমস্যা হতে পারে। 

অনেক আগ থেকে সরিষার তেল মানুষ হাতে মুখে ব্যবহার করে থবক মুখে সরিষার তেল না মাখাই ভালো কারণ সরিষার তেল ত্বকের অনেক সময় ক্ষতি করে থাকে। বিশেষ করে যাদের সেনসিটিভ স্কিন এবং এলার্জিটিক স্কিন তাদের ক্ষেত্রে সরিষার তেল মুখে ব্যবহার না করায় উত্তম। সরিষার তেল মেখে রোদ্রে গেলে ত্বক অনেক কালো হয়ে যায়। সরিষার তেলে ইউরিক এসিড থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা এবং ইউরোপে এই তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

এই দেশগুলোতে নিষিদ্ধ হলেও এশিয়ার সকল দেশে সরিষার তেল রান্নার কাজে ব্যাপকভাবে জওয়ানপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের পাশাপাশি খাঁটি  ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেল এটি রান্নার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রান্না ছাড়াও আচার ভর্তা এক্ষেত্রেও সরিষার তেলের ব্যবহার অনেক বেশি হয়ে থাকে। যতগুলো তেল পাওয়া যায় তার মধ্যে ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী।

রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা

রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক রয়েছে। চলুন জেনে নিন রান্নাতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। আমরা জানি যে সরিষার তেলের সুগন্ধ রান্নার সাদ বাড়াতে বিশেষ কার্যকরী। আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন রান্নাতে সরিষার তেল খাওয়ার ফলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রান্নাতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে হৃদরোগজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।

সরিষার তেলে থাকা মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ক্লোস্টরেলের মাত্রা কমায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেল থাকা ওমেগা থ্রি পলি আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড করুন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সরিষার তেল রান্নাতে ব্যবহার করলে ৫০% টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সরিষার তেল থাকা এলিন মুদ্রা সয় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪% কমিয়ে দেয়।
সরিষার তেলে থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান হজম শক্তি উন্নত করে এবং দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকরী। সরিষার তেলে ক্লোরেস্ট্রলের পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সহায়তা করে। সরিষার তেল কোলেস্টেরল এর ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। যার ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে। ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করে সরিষার তেল। তাই যাদের বেশি বেশি ক্ষুধা লাগার সমস্যা আছে তারা তরকারিতে সরিষার তেল খেতে পারেন।

ত্বকে সরিষার তেলের উপকারিতা

ত্বকে সরিষার তেলের উপকারিতা কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না। জেনে নিন ত্বকে সরিষার তেল ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। আমরা জানি সরিষার তেল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল যা এলার্জি ও rash প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তোকে শুষ্কতা ও চুলকানি রোধ করতেও সরিষার তেল বিশেষ উপকারী। ত্বকে ডার্ক স্পট দূর করতেও সরিষার তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে অনেক রকমের উপাদান রয়েছে।

যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম যা চুল বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও প্রতিদিন রাতে সরিষার তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল বৃদ্ধি পায় ও চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সরিষার তেল শরীরে মালিশ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে। অনেকেই মনে করেন যে সরিষার তেল ব্যবহার করলে ত্বক কালো হয়ে যায় এ ধরনের সম্পূর্ণ ভুল। সরিষার তেলে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকায় ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাই।

সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম

সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। অনেকেই জানেন না যে কোন কোন জিনিসের সাথে সরিষার তেল খাওয়া যায়। সরিষার তেল আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন। প্রথমত সরিষার তেল আপনি রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার তেলে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যে আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। অথবা আপনি রান্না বান্নার পাশাপাশি বিভিন্ন সালাতেও সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে প্রতিদিন এক থেকে দুই চা চামচ সরিষার তেল খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
সরিষার-তেল-খাওয়ার-নিয়ম
২০১০ সালে The American Journal of Clinical Nutrition-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সরিষার তেলে থাকা ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি প্রায় ৭০% পর্যন্ত কমাতে পারে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৪ সালে প্রকাশিত Cancer Letters-এর একটি গবেষণা বলেছে যে সরিষার তেলে উপস্থিত আলাইল আইসোথায়োসায়ানেট ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সরিষার তেল খাওয়া উচিত নয়। আরো জানতে ক্লিক করুন

চুলে সরিষার তেল ব্যবহারের নিয়ম

চুলে সরিষার তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। সরিষার তেল রান্নার পাশাপাশি চুলের জন্যেও বেশ কার্যকরী। কেননা সরিষার তেলে রয়েছে ওমেগা থ্রি এবং প্রোটিন যা চুলের বিভিন্ন গ্রোথ কে ভালো রাখে। অনেকেই ভাবনাতে পড়ে যায় যে সরিষার তেল সত্যি সত্যিই চুলের গ্রোথ কে ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। হ্যাঁ সত্যি সরিষার তেল চুলের গ্রোথ কে ভালো রাখতে কার্যকরী। তবে সরিষার তেল চুলে ব্যবহার করে বাহিরে যাওয়ার ঠিক নয়।
সরিষার তেল ধুলা-ময়লা কে আকৃষ্ট করে যার ফলে চুলে প্রচুর পরিমাণে ময়লা জমে থাকে তাই সরিষার তেল ব্যবহার করার পরে বাহিরে না যাওয়াই ভালো। প্রতিদিন সরিষার তেল ব্যবহার করা ঠিক নয় সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করা ভালো। এমনকি অতিরিক্ত পরিমাণে চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করা যাবে না। যদি আপনার চুল অনেক ড্যামেজ হয়ে থাকে তাহলে চার থেকে পাঁচ চামচ তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর নরমাল চুলে দুই থেকে তিন চামচ তেল ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের যত্নে সরিষার তেল ও মেহেদী

চুলের যত্নে সরিষার তেল ও মেহেদী খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অনেকেই আছেন যারা চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করতে চান না কিন্তু তারা জানে না সরিষার তেল চুলে ব্যবহার করলে কতটা উপকার পাওয়া যায়। সরিষার তেল ব্যবহার করার ফলে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুল ড্যামেজ হওয়া প্রতিরোধ করে। তবে সরিষার তেলের সাথে যদি মেহেদী ব্যবহার করে চুলে দেওয়া যায় তাহলে এর উপকারিতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। মেহেদী ও সরিষার তেল একসাথে ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ও চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাই।
চুলের-যত্নে-সরিষার-তেল-ও-মেহেদী
অনেকেই সরিষার তেল ও মেহেদী কিভাবে একসাথে তুলে ব্যবহার করতে হয় তার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। চিন্তা করার কিছু নেই কারণ আমি আপনাদের কাছে শেয়ার করব কিভাবে চুলে সরিষার তেল ও মেহেদী একসাথে ব্যবহার করবেন। একটি পাত্রে ২০০গ্রাম সরিষার তেল ঢেলে নিয়ে চুলার উপর  বসিয়ে দিন। তারপর তার মধ্যে এক কাপ মেহেদী পাতা দিয়ে চুলাতে জাল করতে থাকুন। যখন মেহেদী পাতাগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে তখন চুলা থেকে তা নামিয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার পর চুলে ব্যবহার করুন আশা করি খুব ভালো ফলাফল পাবেন।

শেষ মন্তব্যঃ সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আশা করি আপনি খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। সরিষার তেলের কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর উপকারিতায় অনেক বেশি। সঠিক পরিমাণে সরিষার তেল গ্রহণ করলে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না ইনশাআল্লাহ। গবেষকদের মতে নিয়মিত এক থেকে দুই চা চামচ সরিষার তেল গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। সরিষার তেল শুধু তরকারিতেই নয় বরং ত্বক থেকে শুরু করে শরীর চুল এবং আরো অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রিয় পাঠক আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্ট এর নিচে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করতে একদম ভুলবেন না। আপনার একটি মন্তব্য হতে পারে আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্টটি সবার মাঝে শেয়ার করবেন। আর আপনার কোন বিষয় নিয়ে যদি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করবেন। প্রতিদিন এরকম নিত্য নতুন তথ্য বহুল কনটেন্ট পড়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটিকে নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমস ব্লগারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url